ভালোবাসি_প্রিয়
#দিয়া_ইসলাম
আহিল আজ অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়েছে, শান্তার জন্য মোবাইল কিনবে বলে।আগে একটা সিম কার্ড কিনে পরে মোবাইলের দোকানে গেলো সে।মোবাইলের দোকানে গিয়ে একটাও ফোন পছন্দ হচ্ছে না আহিলের। এসব বাটন ফোন আজকালকার যুগে কেউ চালায়! কিন্তু শান্তা তো বলেছিলো এধরনেরই ফোন নিতে। আহিল অনেক বাছাখোটা করে দোকানে থাকা সব থেকে ভালো Nokia বাটন ফোনটা কিনলো। দাম মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা!
আহিল ফোনটা নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়েছে। হেটে হেটে বাইক যেখানে পার্ক করেছিলো সেখানে যাচ্ছে । কিন্তু তার মন কেনো জানি মানছে না!হঠাৎ করে আহিল পিছনে ঘুরে আবার দোকানটায় ফেরত গেলো। দোকানদারকে Huawei কোম্পানীর ফোন দেখাতে বললো। আহিল এবার নিজের পছন্দ মতো ভালো মডেলের একটা ফোন কিনলো। ফোনটার রং গ্রে (অ্যাশ)। এটা শান্তার জন্য বেস্ট হবে।
মোবাইলের দোকান থেকে বেরিয়ে পাশেই একটা খাবারের দোকান! আহিল সেখান থেকে চিকেন ফ্রাই, আইসক্রিম, চিপস কিনে নিয়ে গেলো। এসব খাবার শান্তার অনেক পছন্দ।আগে আহিল অফিস থেকে ফেরার পথে প্রায় এসব নিয়ে যেতো। কিন্তু আজকাল.......!
আহিল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। দেখা যাক না শান্তাকে তাকে একটা সুযোগ দেয় কিনা! মহানবী (স) তো বলেছেন-" তোমরা পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়।" হ্যাঁ আহিল পাপ করেছে, কিন্তু তাই বলে কি পাপের রাস্তা থেকে ফিরে আশার একটা সুযোগ সে পাবে না!
আহিল হেলমেট লাগিয়ে বাইকে উঠে বসলো। রওনা দিলো বাসার দিকে। কলিংবেল বাজাতেই মামুন চাচা দরজা খুললো। আহিল ভাবছিলো আজকে হয়তো শান্তা দরজা খুলবে।
আহিল - চাচা, শান্তা কোথায়?
মামুন চাচা হাসি মুখে উত্তর দিলো - "রুমেই আছে।"
আহিল এক হাতে সব প্যাকেট গুলো ধরে অন্য হাত জুতা খুলে নিজের রুমে গেলো। রুমের দরজা খুলতেই দেখলো শান্তা এক ধ্যানে বই এর দিকে তাকিয়ে আছে। আহিল প্যাকেট গুলো বিছানায় রেখে শান্তার কাছে গেলো।
এদিকে -
শান্তার কোনো খেয়ালই নেই যে আহিল ঘরে চলে এসেছে। সে খুব মনোযোগ দিয়ে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেকদিন পর আজ সে পড়ার টেবিলে বসেছে।ভার্সিটির ক্লাস গুলোও করা হয় না কয়েকমাস!আর ক্লাস করার ইচ্ছেও নেই তার।
বইয়ের একটা অধ্যায়ের কয়েকটা মাত্র প্যারা পড়েছে শান্তা। টপিকটা ছিলো হৃদপিন্ডের কপাটিকা নিয়ে।আমাদের হৃদপিন্ডে ৩ জোড়া অর্থাৎ ৬ টা কপাটিকা আছে। কপাটিকা গুলো হৃদপিন্ডে বিষাক্ত রক্ত পুনঃশোষণের পর আবার একই চেম্বারে ফিরে আসতে বাধা প্রদান করে। যার কারণে হৃদপিন্ডের মধ্যে খুব সুন্দর একটা সার্কেল তৈরি হয়ে আছে ,বিষাক্ত রক্তের সাথে কখনো পরিশোধিত রক্ত মিলে যায় না! মানুষের জীবনটাও যদি এমন হতো! বিষাক্ত সকল কিছুকে যদি এই কপাটিকার মতো কোনো কিছু দিয়ে বাধা প্রদান করে আটকে দেয়া যেতো। কতই না ভালো হতো তবে!
শান্তা ভাবনায় মশগুল! আহিল এসে পিছন থেকে টেবিলের উপর দুহাত ভর করে শান্তাকে আগলে দাঁড়ালো। হঠাৎ করে এমন হওয়ায় শান্তা অবাক হয়ে পেছনে তাকায়।
শান্তা - তুমি চলে এসেছো!
আহিল - হুম! এসেই দেখলাম তুমি খুব মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছো তাই আর ডাকি নি।আচ্ছা এতো মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছো দেখি?
আহিল দেখলো শান্তার সামনে হৃদপিন্ডের ছবি আকা একটা পেইজ খোলা।
আহিল - হার্ট নিয়ে পড়াশোনা করছো!
শান্তা - হুম!
আহিল - আচ্ছা তুমি যখন হার্টের ডক্টর হয়ে যাবে, তখন আমার কাছ থেকে আবার ফিজ নেবে না তো! শুনেছি হার্টের ডক্টরদের ফিজ অনেক হয়! আমার কাছে কিন্তু ওতো টাকা নেই! আগেই বলে দিলাম!
আহিলের কথায় সাথে সাথে শান্তার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। কিন্তু হাসিটা ছিলো ক্ষণস্থায়ী, ৩ কি ৪ সেকেন্ডের মতো ।কিন্তু এই ৩-৪ সেকেন্ডও আহিলের জন্য অনেক মূল্যবান। মনের মধ্যে আবছা হয়ে যাওয়া এই অপরূপ চেহারার ছবিটা সে আবার গারো করে একে নিতে চায়।আর এবার এতোটা গারো করে আকতে চায় যেনো হাজার ঘষলেও সেটা মুছে না যায়। শান্তা ডান কাত হয়ে আহিলের দিকে তাকিয়ে ছিলো বলে যখন হাসছিলো তখন গালের টোল টা ভেসে উঠেছিলো।
শান্তা কখনো শব্দ করে হাসে না আবার শব্দ করে কাঁদেও না! এই মেয়েটার সব কিছুই কেমন যেন নিঃশব্দে! অতিরিক্ত হাসি আসলে ডান হাতটা মুখে দিয়ে হাসে।
আহিল - কি হলো এতো হাসছো যে! আমি কিন্তু সত্যি এত টাকা দিতে পারবো না।
শান্তা - আচ্ছা দিতে হবে না তোমায়! তোমার জন্য সব মাফ!
আহিল এবার শান্তার সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো। তারপর শান্তাকে জড়িয়ে নিলো তার বুকের মাঝে।
আহিল - সত্যি বলছো! সব মাফ!?
শান্তা - সব মাফ!
আহিল - সব?
শান্তা - হুম!
আহিল এবার শান্তার দিকে তাকালো। শান্তার চেহারায় আবার গম্ভীরতা ভেসে উঠেছে। আহিলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকালো সে।
আহিল শান্তার হাত ধরে চেয়ার থেকে উঠিয়ে বিছানায় বসালো। আহিল হাজার চেষ্টা করেও শান্তাকে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে রাজি করাতে পারেনি। উল্টে শান্তা ওটা আহিলকে ব্যবহার করতে বললো। কারণ আহিলের ফোনের ব্যাক কভারের রং কোথাও কোথাও একটু উঠে গেছে।
আহিল যখন শান্তার সামনে খাবার গুলো রাখলো তখন শান্তা নির্বাক দৃষ্টিতে আহিলের দিকে তাকিয়ে ছিলো।সে যেনো আহিলকে অনেক কিছু বলতে চাইছিলো। কিন্তু কথা গুলো ঠোঁটে এসে শব্দের আকার নিতে পারছিলো না।
কোনো খাবারই পুরোটা খায়নি শান্তা। শুধু চিপসটাই খেয়েছে, সান চিপস নীল রঙের প্যাকেটটা। এই চিপসটা কেনো জানি শান্তার অনেক ভালো লাগে। আহিলের অনেক জোরাজুরিতে আইসক্রিম অর্ধেকটা খেয়েছে আর চিকেন ফ্রাই এক কামড় খেয়েছে।
রাত ৯ টায় -
আহিল নামাজ শেষ করে রুমে খাবার নিয়ে আসে। শান্তা তখন নামাজ শেষ করে কুরআন পড়ছিল।
শান্তা - আরে তুমি এখানে বসে খাচ্ছো কেন? আমাকে বললে তো টেবিলে খাবার এনে দিতাম।
আহিল- বেশি কথা না বলে কোরআন পড়া শেষ হলে এখানে এসে বসো।
শান্তা কোরআন মাজিদ জায়গা মতো রেখে আহিল কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
আহিল - দাড়িয়ে থাকতে নয় বসতে বলেছিলাম।
আহিল শান্তার হাত টেনে নিজের সামনে বসিয়ে দিলো।
আহিল - হা করো।
শান্তা -আমি এসব দিয়ে খাবো না, ডাল দিয়ে খেয়ে নেবো। তুমি খেয়ে নাও।
আহিল - আমি খাবারটা মুখে নিতে বলেছি।
শান্তা - বমি আসবে।
আহিল - বমি আসলে বমি করবে, কিন্তু এখন খেতে হবে।
শান্তা খাবারটা মুখে নিলো।কিন্তু আজ বমি আসছে না। আসবেই বা কি করে! আহিল খাবারে লেবু দিয়ে দিয়েছে। আহিলের ছোটবেলায় জ্বর হলে বা খাবারের প্রতি অনীহা আসলে মা এভাবেই খাইয়ে দিতো।
খাওয়া শেষে -
আহিল - বমি এসেছে?
শান্তা - উহুম।
আহিল - গুড, তাহলে এখন চুপচাপ শুয়ে থাকো। আমি প্লেট রেখে আসছি।
রাত ২ টা -
শান্তাকে আষ্ঠেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে আহিল। অনেকদিন পর তারা একে অপরের এত কাছে এলো। শান্তা ঘুমিয়ে গেছে।কিন্তু আহিলের চোখে ঘুম নেই।ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় শান্তাকে এক দৃষ্টে দেখে যাচ্ছে আহিল।নিজের কৃতকর্মের জন্য ভীষণ ভাবে অনুতপ্ত সে।তার ভুলের জন্য শান্তা আর তার মাঝে যে অদৃশ্য দেয়াল গড়ে উঠেছে সেটা তাকেই ভাঙতে হবে।
পরেরদিন সকালে -
আজ শুক্রবার। আহিলের অফিস ছুটি। আজ সে শান্তাকে নিয়ে শপিং এ যাবে ভেবেছে। অনেকদিন শান্তার হাতটা ধরে হাটা হয় না।কদমের সাথে কদম মিলিয়ে পথ চলা হয় না।কিন্তু আজ চলবে। অনেকটা পথ পাড়ি দেবে সে শান্তাকে নিয়ে।এক মুহূর্তের জন্যও শান্তার হাতটা ছাড়বে না!
দৃশ্য গুলো মনের মধ্যে কল্পনা করে মৃদু হেসে আহিল আড়মোড়া দিয়ে বিছানা থেকে উঠলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হলো।
রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় একজনকে বসে থাকতে দেখে আহিলের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। আহিল আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো।শান্তা কোথাও নেই। আহিল তাড়াতাড়ি সোফায় বসে থাকা ব্যক্তিটির কাছে গেলো।
আহিল - রিয়া!!
রিয়া - ওহ, আহিল!
আহিল - তুমি এখানে?
রিয়া - কতক্ষণ ধরে বসে তোমার জন্য বসে আছি, জানো!কোথায় জিজ্ঞেস করবে কেমন আছি তা না সোজা জিজ্ঞেস করছো কেনো এসেছি! আজ এতো লেট করে ঘুম থেকে উঠলে যে! নাকি কাল রাতে বউ এর সাথে....
রিয়া আর কিছু বলার আগেই আহিল চিৎকার করে উঠলো।
আহিল - shut up!! কেনো এসেছো এখানে? কি চাই?
রিয়া - আরে আস্তে আস্তে। চিৎকার করো না। পরে তোমার বউ জানতে পারলে কিন্তু তোমারই সমস্যা হবে!
আহিল - কি জন্য এখানে এসেছো সেটা বলো!
রিয়া - আহিল জানু, এই জন্যই তো তোমাকে আমার এত্তো ভালো লাগে। সোজাসুজি কাজের কথা বলো তুমি। যাই হোক, আমি এখানে এসেছি কারণ আমার কিছু টাকা লাগবে!
রিয়ার কথা শুনে আহিল তাচ্ছিল্য মূলক হাসি দিলো।
রিয়া - হাসছো যে! আমি তো আমার প্রাপ্য চাইছি। বউ রেখে অন্য নারীর সাথে শুয়ে এসেছো! তার প্রাপ্য তো তোমাকে দিতেই হবে।
আহিল - আর একটা বাজে কথা বললে তোর জিভ আমি টেনে ছিড়ে ফেলবো। আমি তোর সাথে ইচ্ছে করে শুয়েছি নাকি তুই আমাকে তোর মিথ্যে নাটকের জালে ফাসিয়েছিস।
রিয়া - ওহ।আমি ফাসালাম আর তুমি ফেসে গেলে!
শান্তা - আহিল!
চলবে!
[ভালো না লাগলে এভোয়েড করবেন।ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]
এখানে আপনার মতামত দিন👇👇