পরীর সাথে বিয়ে
রহিম মাঝি এর অভাবের সংসারে প্রতিদিন খাবারের জন্য হাহাকার লাগে,,
ছেলে মেয়ে গুলো বড় হইতেছে আর তাদের চাহিদা ও দিন দিন বাড়ছে,,
উনার স্ত্রী আসিয়া বেগম প্রতিদিন ঘ্যান ঘ্যান করে আর বলে বড় ছেলেটা এখন কলেজের পড়া বন্ধ করে সারাদিন আড্ডা দেয়,, এই অভাবের সংসারে মেধা থাকতেও ছেলেটা পরতে পারলো না,, আর এখন ওকে ঠিক মতো কোনো কাজ টাজ না শিখালে ভবিষ্যৎ এ তো ওর জন্যই খারাপ হবে,,,
আর ছোট ছেলে মেয়ে গুলোও ঠিক মতো স্কুলের বেতন বই খাতা এসব দিতে না পারায়,, ওরাও প্রতিদিন চিল্লাচিল্লি করে,,
রহিম মাঝি অনেকক্ষন কথা গুলো চুপচাপ শুনে,, বললো কি করমু৷ সামির মা,, একলা একলা এই বিলে আর কয়ডা মাছ ধরতে পারি,,, আমার লগে আরেকজন থাকলে,, তাইলে একটু ভালা রোজগার হইতো,,,
আসিয়াঃ তাইলে আপনের লগে সামি রে নিয়া যান,, ওই আপনের লগে মাছ ধরা টা শিখলো,, ওর নিজের একটা কাম ও শিখা হইলো আর সংসারে একটু হাল ও ধরলো
রহিমঃ তোমার পোলায় কি যাইবো?
আসিয়াঃ যাইবো না মানে,, ওর বাপ শুদ্ধ যাইবো
রহিমঃ হাহাহা ওর বাপ তো ৩০ বছর ধইরা যাইতাছে,, এবার পোলারে একটু বুঝাও,
মা ওই মা,, কি রানছো দেহি,, দেও ভাত দেও,, ক্ষিদা লাগছে অনেক
আসিয়াঃ ভাত কইতে আহে,, হেই খেয়াল রাখোস??
তোর বাপে বুড়া হইতাছে,, এখন তোর একটা কাম কাইজ করা দরকার,, ওইডা কি বুঝস?
সামিঃ এই গ্রামে কাম আছে কোনো? শহরে যাইতে হইবো কামের জন্য
আসিয়াঃ আর,,বয়,, ভাত দেই,,
সামিঃ আজকে কি রান্না করছ?
আসিয়া ওর ছেলের থালায় ভাত,, কিছু মলা ঢেলা মাছের চরচরি আর একটু লাউ শাক দিয়ে বললো,,, বাজান তুই এখন কয়দিন তোর বাপের লগে মাছ ধরতে যা,,, কয়ডা টেহা পয়সা রোজগার কর,,, নিজের ভবিষ্যতের চিন্তা কর,,ছোট ভাই বোনের একটু চিন্তা কর,,
সামিঃ তোমার জামাই খালি চিল্লায়,, যামুনা হের লগে আমি,,
আসিয়াঃ আর চিল্লাইবো না, আমি কইয়া দিমু নে
সামিঃ আইচ্ছা যামুনে তাইলে
আসিয়াঃ রাইতে যাইস,,, পাশের গ্রামে নাকি বিলে এখন নতুন শাপলা আইছে,,, ওই বিলের মাঝে নাকে একটা পুকুর আছে,, অনেক পুরাতন পুকুর তো,, এর জন্য ওইখানে কেউ জায় না,,
তোর বাপে খবর নিচে,,, ওই পুকুরে আর বর্ষার পানি এসে বিল টা এখন মাছে ভর্তি,, রাইতে নাকি ভালো মাছ পাওয়া যায়,,
সামিঃ কি কও,, রাইতে গিয়া বিলে মাছ ধরমু,, যদি ভুত পিশাচ এ ধরে?
আসিয়াঃ আরে বাজান কি কস,, বাপ বেটার সামনে কি ভুত আহে নি,, ডরাইস না
সামিঃ ঠিক আছে,, যামু তাইলে
রাত হলো,, রহিম মাঝি জাল নিয়ে তৈরি হচ্ছে,,
সামি টেডা (বর্শা) আর হারিকেন নিয়ে তৈরি হলো,,
বাপ বেটা দুজন মিলে নৌকা বাইতে বাইতে পাশের গ্রামের বিলের পানিতে উঠলো,,,
জোছনা রাত,, চাদের আলো স্পষ্ট বিলের পানিতে পরে শাপলা আর পানির ঢেউ টা অসম্ভব সুন্দর লাগতেছে,,,
রহিম মাঝি জাল ফেললো,, অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পরে,,জাল তুললো দুজন মিলে,, দেখলো ভালোই মাছ উঠেছে,,
পুটি,,ফলি,,টাকি,, টেংরা মাছ উঠলো,,,
কয়েকবার জাল ফেলায় ওরা দুজন অনেক গুলো মাছ শিকার করলো,,
রাত টা একটু গভীর হলো,,, ওরা মাছ ধরছে,,
একটু দূরে সামি দেখলো শাপলা গুলো নড়াচড়া করছে,,, বড় কোনো মাছ আছে ভেবে সামি টেডা টা হাতে নিলো,,, একটু পরে দেখলো বিশাল একটা মাছের লেজ নড়াচড়া করছে,,
সামি ওর বাপকে বললো,, বাবা ওইখানে যাও,, বড় একটা মাছ দেখলাম
রহিম বড় মাছের কথা শুনে নৌকা ওই দিকটায় নিয়ে গেলো,,
কিন্তু ওরা যেতে যেতে মাছের লেজটা আর দেখলো না,,
এভাবে কয়েকদিন ওরা মাছ ধরলো,,, মাছ গুলো বিক্রি করে ভালোই টাকা উপার্জন করলো,,
একদিন রহিম মাঝির অনেক জ্বর আসলো,,, ডাক্তারের কাছে নিলো,, ঔষুধ এ অনেক টাকা চলে গেলো,,৷ রহিম মাঝিকে বিশ্রামে থাকার জন্য বললো ডাক্তার
এদিকে খাওয়ার টাকা ও ঘরে বাজার ও শেষ হতে চললো,,, আসিয়া বললো সামি বাজান তুই যদি কয়দিন মাছ ধরতি,, তাইলে একটু ভালা হইতো,,,,
সামিঃ আচ্ছা,, চিন্তা কইরো না,, মাছ ধরার জায়গা টা আমি চিনছি,, কয়দিন আমি একলাই মাছ ধরমু,,
রাতে সামি নৌকা বেয়ে গেলো বিলে,,,
জাল ফেলতেই আজ মাছ একটু কম এলো,,,।
মন খারাপ হয়ে গেলো সামির,,
আবার জাল ফেললো,,,আর অপেক্ষা করে গুনগুন করে গান গাইতে লাগলো,,,
মনের আনন্দে গলা ছেরে গান গাইছে সামি,,
একটু পরে ও অনুভব করলো ওর নৌকা টা ঘুরছে,, আশেপাশে অনেক ঢেউ শুরু হলো,,,
সামি ভয় পেয়ে গেলো,,, আচমকা এমন হওয়ার তো কোনো কারন নেই,,, বাতাস নেই,,, তাহলে নৌকা কেনো ঘুরছে আর ঢেউ শুধু নৌকার চারপাশে কেনো?
সামি জাল টানতে লাগলো,,
পেছন থেকে এক মেয়ে পানিতে ভেসে উঠলো,,,
সামি পেছনে তাকিয়ে দেখে এক অপরুপা সুন্দরী মেয়ে ওর নৌকায় হাত রেখে ওর দিকে চেয়ে আছে,,,
শুধু মাথা আর বুকটা উপরে আর পুরো শরীর পানির নিচে,,
এতরাত এই বিলে এতো সুন্দরী মেয়ে আসলো কোথা থেকে,,, সামি ভয় পেয়ে গেলো,,
ভয়ে ও জাল ছেরে দারিয়ে গেলো,,
মেয়েটি ওকে বললো,,এতোক্ষন গান কি তুমি গাইছিলে?
সামি ভয় ভয় গলায় বললো জ্বি আমি গান গাইছি,,, কিন্তু আপনি কে,, আর এতোরাতে এই বিলের পানিতে কি করেন?
মেয়েটি বললো,,ভয় করো না,, আমি এই গ্রামে বেড়াতে এসেছি,, রাতে বিলের পানিটা ভালো লাগলো,,তাই গোসল করতে নেমেছি,,
আমার নাম ফুজি,, তোমার গানের সুরে আমি এসেছি,,
সামিঃ এইটা কোনো কথা হলো,, বেড়াতে আসছেন,, আর গভীর রাতে একা একা বিলের পানিতে আসছেন গোসল করতে,, সত্যি করে বলেন আপনি কে?
ফুজিঃ আরে ভয় পাচ্ছো কেনো?
সামিঃ দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন,, মারবেন না,, আমার বাবা অসুস্থ,, মা বৃদ্ধ,, ছোট ছোট ভাই বোন আছে,,, আমি কথা দিচ্ছি আর কোনদিন এখানে আসবো না
ফুজিঃ আরে বুদ্ধু,, বললাম তো ভয় পেয়ো না,, যদি তুমি এমন করো,, তাহলে আমি এখন ই চলে যাবো,,আর কোনদিন আসবো না,,
সামিঃ ঠিক আছে চলে যান,, আমাকে ছেড়ে দিন
ফুজিঃ তুমি আমার সংগে ঠিক মতো কথা ও বললে না,, পরিচয় টাও হলে না,,,
আমরা কিন্তু ভালো বন্ধু হতে পারি
সামিঃ দরকার নেই,, আমি এমনই ভালে আছি
ফুজিঃ আজকে কিন্তু তোমার জালে বড় একটা বোয়াল মাছ ধরা পরেছে,,
সামিঃ কি বলেন,, আপনি জানেন কিভাবে?..
ফুজিঃ বলবো না এতো কিছু,, তুমি তো আমাকে বন্ধুই বানাতে ভয় পাচ্ছো,,
সামিঃ আচ্ছা থাক,, লাগবে না আমার বোয়াল মাছ,,,
ফুজি মন খারাপ করলো,,এই জোছনার আলোয় ওর সুন্দরী মুখা টা কালো দেখে সামির মন টাও খারাপ হলো,,
ফুজিঃ ঠিক আছে,, আমি চলে যাচ্ছি,, তবে কখনো আমাকে মনে পরলে,, এই পানিতে হাত দিয়ে তিনটা বারি দিয়ে বলবা ফুজি,, তাহলেই আমি চলে আসবো,,
সামি কিছু বললো না,,শুধু মাথা নাড়ালো,,
ফুজি সাঁতরে পানির নিচে চলে গেলো,,
সামির ভয়টা কাটলো,, কিন্তু ও মনে মনে ভাবলো এতো সুন্দরী মেয়ে,, ওর কোনো ক্ষতি ও করলো না,, আবার গানের প্রশংসা করলো,,, এটা তো ভুত বা পিশাচ হতে পারে না,,, এটা অন্যকিছু হবে,,
এসব ভাবতে ভাবতে ও জাল টানতে লাগলো,,,,
আজকের জাল টা বেশ ভারি মনে হলো,,
অনেক কষ্ট করে জাল উপরে তুলে দেখলো সত্যি বিশাল একটা বোয়ালমাছ ধরা পরছে,,
এই বিলে এতো বড় বোয়ালমাছ পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যপার,,, মনে মনে ফুজিকে ধন্যবাদ দিলো আর ভাবলো,মেয়েটা সত্যি ভাগ্যবতী,, তাই বোয়ালমাছ এর কথাটা আগে থেকেই জানছে,,
আজ আর মাছ ধরলো না,, বাজারে এই মাছ বিক্রি করলে অনেক টাকা পাবে,,,
সামি নৌকা বেয়ে চলে গেলো বাড়ির দিকে,,
চলবে,,,,,
এখানে আপনার মতামত দিন👇👇