গল্প: অতৃপ্ত
পর্ব,৩
কে এই বাচ্চা ? প্রতিদিন কেন আসে নদীর দুগ্ধ পান করতে ? নদীর চেকআপে ভুল রিপোর্ট আসে কেন? মন্ত্র পড়ার সময় সাগর কে বাধা কে দিলো , আর কেনই বা দিলো ?
কয়েকটি প্রশ্ন চলে আসে সাগরের সামনে একটা প্রশ্ন আরেকটার সাথে জড়িত । কিভাবে সমাধান হবে এই রহস্যর ? সাগর কি পারবে এই রহস্যের সমাধান করতে ?
নদীর কাশির শব্দে সাগর ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে । সাগর নদীর কাছে গিয়ে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিলো ,
পানি খেয়ে নদী সাগরের দিকে তাকায় । নদী এখনো ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে সেটা সাগর বুঝতে পেরে নদীর পাশে বসে নদীকে জড়িয়ে ধরে। খেয়াল করে নদী বুকের মাঝেও কাঁপছে তাই একটু ভালো করে জড়িয়ে ধরে। দুই মিনিট ,
পাঁচ মিনিট , দশ মিনিট , এভাবে প্রায় আধা ঘন্টা সাগর নদীকে জড়িয়ে ধরে রাখার পর আস্তে আস্তে নদীর ভয় কিছুটা কমে ।
ভয় কমে গেলে নদী হাতে গরম গরম কিছু একটা অনুভব করতে লাগলো । সাগরের পিঠ থেকে হাত সরিয়ে এনে দেখে রক্ত , বিছানায় অনেকটা রক্ত পরছে । নদী সাগরকে একটু ঘুরিয় বসিয়ে পিঠ থেকে তিনটা কাঁচের টুকরো বের করে ।
সাগর স্যাভলন , পানি মলম এনে দিলে নদী সাগরের পিঠে লাগিয়ে দেয় । সবকিছু ঠিকঠাক করে সে রাতের মতো দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে । পরের দিন নদীর হাতে একটা তাবিজ বেঁধে দেয় সাগর । সেই থেকে বাচ্চা টা নদীর কাছে আর আসতে পারে না ।
সাগর ও নদীর দিন গুলো কাটতে লাগলো , নদীর মধ্যে থাকা অবয়বটাও অনেক টা বড়ো হয়েছে । নদীর গর্ভে বাচ্চা আছে সেটা এখন তার শাশুড়িও জানে তাই নদীর কোনো অযত্ন করেনি , তার ধারণা এরকম হয় ।
সাগর প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে নদীর পেটে কান পেতে কথা বলে । এভাবে ভালোই দিন কাটছিলো , নদীর সাথে সেদিনের পর থেকে তেমন কিছু ঘটেনি কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন টিকলো না মাত্র পনেরো দিন পর নদী তাদের বেডরুম থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় ।
নদী রুমের ভেতরে গেলেই কান্নার আওয়াজ টা বাড়ে , যখন সাগর রুমে থাকে তখন আর আসে না । দিন যত যায় কান্না ততো বেশি করে , একদিন সাগরও সেই কান্নার আওয়াজ শুনতে পায় । কোথায় থেকে কান্না আসে সেটা দেখা যায় না কিন্তু রুমের মধ্যে যে কেউ কাঁদে সেটা স্পষ্ট বোঝা যায় ।
সাগর অনেক চেষ্টা করেও সে কান্না থামাতে পারেনা । যখনি কান্না থামাতে কোনো মন্ত্র প্রয়োগ করে সেদিনই কিছু না কিছু একটা অনিষ্ট হয় সাগরের । সাগর ঠিক মতো মন্র পড়তে পারে না কে যেনো সাগরকে বাধা দেয় । তাই আজ সাগরের বাবার রেখে যাওয়া বইটার কথা মনে পড়ে যায় ।
বাবা বলেছিলো কোনো একদিন এই বইটা তোর কাজে দিবে । বাবার থেকেই সাগর কিছু কিছু মন্র শিখেছে কিন্তু বাবার মতো না।
তাই মৃত্যুর ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে সাগরের কাছে বইটা দিয়েছিলো যেটা কিনা আজ পর্যন্ত সাগর খুলে দেখেনি ।
সাগর পাকপবিত্র হয়ে বাবার দেওয়া বইটা লকার থেকে বের করে পড়তে লাগলো । সবকিছু অশরিরি নিয়ে ভয়ংকর ভাবে লেখা বইটাতে ।
বইটা যখন পড়ে তখন সাগরের শরির শিরশির অনূভব করে ।
নদীও বুঝতে পারেনা সাগর কি পড়ছে তবে রুমের মধ্যে একটা ঠান্ডা বাতাস বইছে সেটা বোঝা যাচ্ছে , এটা এসি অন থাকার ফলেও হতে পারে । একসময় সাগর খেয়াল করে রুমের মধ্যে কে যেনো গর্জন করছে
এমন একটা ভাব যেনো বইটা পড়তে বারন করছে সাগর কে । সাগর তবুও বইটা পড়ে যাচ্ছে কারন রুমের মধ্যে কান্নার আওয়াজ টা বন্ধ করতে হবে আপাতত । হটাৎ টেবিলের ওপর থেকে কাঁচের গ্লাস টা ফ্লোরে পরে ভেঙ্গে যায় ।
সাধারণ ভাবে পড়লে দুইটা তিনটা বা কয়েকটা টুকরো হতো কিন্তু গ্লাসটা এমন ভাবে পড়েছে সেটা গুড়ো গুড়ো হয়ে যায় । যেন সেটা কেউ গায়ের জোরে আছাড় মেরেছে ।
নদী গ্লাসের কাছে যেতে চাইলে সাগর বইটা পড়া বন্ধ করে নদীকে আটকায় । এদিকে বই পড়া বন্ধ করে দিতেই আবার সবকিছু স্বাভাবিক । সাগর বইটা লকারে রেখে নদীকে অযু করে আসতে বলে ।
নদী কারন জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেয়না সাগর । বই রেখে আসতে আসতে নদীও অযু করে চলে আসে ।
- নদী তোমাকেও এখন মন্ত্র পড়তে হবে ।(সাগর)
- আমি এসব মন্র পড়তে পারি না (নদী)
- চেষ্টা করলেই পারবে ,, বলো ' ঠ্র্তেৎষ্ন্তে ফ্য্যল্ঞেনিয়য়া উ্ষ্ঠ্য
-ঠ্রতেৎষ্তে ফ্যেল্নিয়য়া উষ্ঠ্য (নদী)
- হয়নি ,,, আবার চেষ্টা করো ,, ঠ্র্তেৎষ্ন্তে ফ্য্যল্ঞেনিয়য়া উ্ষ্ঠ্য ,, এভাবে বলো (সাগর)
-ঠ্র্তেৎষ্ন্তে ফ্যেল্নিয়য়া উ্ষ্ঠ্য (নদী)
- আবার বলো (সাগর)
-ঠ্র্তেৎষ্ন্তে ফ্য্যল্ঞেনিয়য়া উ্ষ্ঠ্য (নদী)
হুম এবার হয়েছে । আমি যখন বাচ্চা টার কান্না বন্ধ করার জন্য মন্ত্র পাঠ করবো তখন কেউ না কেউ আমাকে বাধা দেয় । যখন দেখবা আমাকে বাধা দিচ্ছে তখন তুমি এই মন্র উচ্চারণ করতে থাকবে (সাগর)
- বুঝলাম কিন্তু আমি বুঝবো কি করে তোমাকে কেউ বাধা দিচ্ছে ?( নদী)
- আমার বই পড়ার সময় যেমন গ্লাস ভেঙ্গে আমাকে বাধা দিয়েছে ঠিক তেমনি এবারো কিছু একটা করে আমাকে বাধা দিতে চাইবে কিন্তু তুমি সেটা করতে দিবে না ।(সাগর)
- আচ্ছা ঠিক আছে (নদী)
সাগর নদীকে মন্র শিখিয়ে দিয়ে ফ্লোরে নামাজের আসনের মতো বসলো । বসে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলো, নদীও সাগরের পাশে এসে বসে সেটা সাগরের চোখ এড়ায়নি।
অম্রূম্বীঞাল্ঝুরি উম্রোণ্ঞুঞ্জীযি ,,,,,,,,,,
সাগর আর মন্ত্র পড়তে পারলো না। নদী মন্ত্র না পড়ে সাগরকে টেনে উপরে তুলে নেয় । সাগর দেখে নদী হাওয়ায় ভেসে আছে আর নদী ভয়ে সাগরের হাত ধরে আছে যার জন্য সাগরও শুন্যে ভাসছে । নদীর শক্তি কমে আসলে আস্তে আস্তে সাগরকে ছেড়ে দেয় । সাগর কে ছেড়ে দিলে নদী একাই শুন্য দুই মিনিটের মতো ভাসতে থাকে ।
এরকম ঘটনায় সাগরের বোঝার বাকি নেই এটা কোনো শক্তিশালী অশরিরি তাইতো নদী মন্র পড়ার আগেই নদীকে শুন্য তুলে নেয়। সাগর বুঝতে পারে অশরিরি টা বাচ্চাটাকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু তাতে আমার কি ? আমিও আমার বাচ্চা কে অনেক ভালোবাসি তাই যেভাবে হোক ঐ অশরিরি থেকে আমার বাচ্চার আম্মু কে বাঁচাতে হবে নয়তো একসময় আমার বাবুকেই কিছু একটা করে দিবে ।
তবে তাদের বেবি জন্ম নেওয়ার আগে অশরিরিটাকে রাগানো যাবে না তাহলে নদীর ক্ষতি করতে পারে , অশরিরিটাকে না রাগালে তেমন কোনো ক্ষতি আপাদত করবে না। নদী কে ভয় পেতে বারন করে , ধৈর্য ধরতে বলে বাচ্চা জন্ম নেওয়া পর্যন্ত । নদীও সাগরের কথায় সায় দেয় , সাগরও অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সবসময় নদীর কাছে থাকে ,
((গল্পটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়ে একটা মেসেজ দিবেন))
নদী ভয় না পায়।
এই ঘটনা ঘটার চারদিনের মধ্যে নদীর প্রশব বেদনা উঠে । হাসপাতালে নিলে নরমাল ডেলিভারি তে নদীর ফুটফুটে একটা ছেলে হয় কিন্তু ছেলের চোখ দুটো টকটকে লাল ।
নার্সরা এরকম বেবি দেখে অনেক টা অবাক হয়ে যায় ,, এমনিতেই বাচ্চার নয় মাস পুর্ন হয়নি তারওপর বাচ্চার চোখ দুটো লাল । নদীর পাশে বাচ্চা রেখে একটু বাইরে গেলে নদীর কাছে সাগর এসে বসে । তখনই রুমের মধ্যে থেকে হাসির আওয়াজ আসে , সাগর খেয়াল করে তাদের সামনে থাকা নবজাতক শিশু টাও অদ্ভুত এক হাসি দিচ্ছে ।
সাগর এবার বড় ধরনের রহস্যের মধ্যে পড়ে যায় ,, তাদের নবজাতক শিশু টি কে ? জন্ম নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর কিভাবে হাসতে পারে একটা বাচ্চা ? রুমের মধ্যেই বা কে হাসছে ?
👇👇👇👇
(((গল্পটি ভালো লাগলে ও পরের পর্ব গুলো পেতে চাইলে অবশ্যয় আমার আইডিতে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়ে আমার আইডির ( M R N Jisan) সাথেই থাকবেন, ন, পোষ্ট করার সাথে সাথে সবার আগে পাবেন, ধন্যবাদ ❤️❤️))
চলবে...
এখানে আপনার মতামত দিন👇👇