Type Here to Get Search Results !

আজব ভালোবাসা


মনির হোসেন 
ক্ষেতের আইলে দাড়িয়ে আছে তিথি নামের এক তরুণী। তরুণীর গায়ের রং ধবধবে ফর্সা। পড়নে লাল রঙের শাড়ী, শাড়ীটা হাঁটু থেকে একটু নিচে। চুলে লম্বা বিনুনি করা। বিনুনির খোঁপায় একটা গান্ধা ফুল গাঁথা। ক্ষেতে আসার আগেই যেন একটু সাজগোজ করে এসেছে। তার হাতে দু'বাটি ভাত তরকারি। বিশাল বড় ক্ষেতে মৃদু বাতাসে ধানের থোকনা গুলো দিকবেদিক দুলছে। ক্ষেতে দুজন কৃষক উবু হয়ে কোদাল দিয়ে মাটি কোপাচ্ছে। তিথি কৃষকদের দিকে হাত উঠিয়ে বলল।
বাবা খাইতে আসো ভাত নিয়া আইছি।
দুই কৃষকের একজন হলো মতিন মিয়া। তিথি মতিন মিয়ার একমাত্র আদরের কন্যা। এই তো এইবার এইচএসসি দিবে।
দুইজন কৃষক গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে এসে ক্ষেতের আইলে বসতে তিথি বলল।
এই বদমাস তুই এহানে বসোছ কেন? তোর লাইগা কি ভাত আনছি?
তিথি কথাটা সাইমুনকে বলল৷ সাইমুন তার নিজের জমিতে চাষ করে। এই গ্রামের একজন সাধারণ ছেলে। তিথি তার বাবার ভাত আনার সময় প্রতিদিন নিয়ম করে সাইমুনের বাড়ী থেকেও ভাত নিয়ে আসে৷সাইমুন গামছা দিয়ে মুখ মোছা বন্ধ করে ভ্রু কুঁচকে বলল৷
তিতা কি কইলি? আমার লাইগা ভাত আনোছ নাই মানে? সাইমুন তিথিকে তিতা বলেই ডাকে। তিথির অত সুন্দর নামে কখনো ডাকে না। এই নিয়ে তিথিরও কোনো অভিযোগ নেই। তিথি চোখ মুখ শক্ত করে বলল 'না'।আমি কি তোর চাকর নাকি যে প্রতিদিন ভাত নিয়া আসুম? তোর জন্য এহানে ভাত নাই। তুই তোর বাড়ী গিয়া খাইয়া আই। সাইমুন হঠাৎ দাঁত মুখ খিঁচে রাগ করে আইল থেকে নেমে পূনরায় মাটি কাটতে লাগলো। তিথি উপর থেকে গলা উঁচিয়ে বলল।ওই গুন্ডা ভাত খাইয়া যা। চাচি তোর লাইগা ভাত দিছে। আমি তো এমনি বলছি। সাইমুন কিছু না শোনার মতো করে মাটি কেটে যেতে লাগলো।তিথি ক্ষেতে নেমে সাইমুনের সামনে চুলের বিনুনি নাচাতে নাচাতে বলল।
এই খাইতে চল। আরে আমি তো মজা করছি। আমি কি কোনদিন ভাত না আনছি? এই তিন চার বছরে কোনদিন অনিয়ম হইছে?
এখান থেকে সইরা যা কইলাম কোদাল কিন্তু পাঁয়ে পড়বো। তিথি আরও এগিয়ে গিয়ে বলল। সরমু না কি করবি তুই? সাইমুন তিথির দুই বছরের বড় হলেও তিথি তুই করেই বলে। সাইমুন কিছু বলতে যাবে তার আগে তিথি সাইমুনের কোদাল নিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসলো৷তিথি নিজের হাতে সাইমুনকে ভাত বেড়ে দিল। সাইমুনও খাওয়া শুরু করলো। সে কখনো তিথির উপর রাগ ধরে রাখতে পারে না। সাইমুনের খাওয়া শেষ হতেই তিথি বলল।

পুরুষ বেডা এতো দেমাক দেখাছ কেন? এ্যা আইছেরে আমার রাগী পুরুষ? বিয়ার পর দেখমু বউর লগে কেমনে রাগ দেখাতে পারোছ?
কথাটা বলেই তিথি জিহ্বা দিয়ে ভেংচি কাটলো। সাইমুন ধমকি দিয়ে বলল৷ তবে রে? আমারে ভেংচি কাটোছ?
তিথি দিল দৌড় সাইমুনও তিথির পিছন পিছন দৌড়াতে লাগলো। দৌড়ানোর তালে তিথির চুলের বিনুনি এদিকসেদিক দুলতে লাগলো। তিথি দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠ পেরিয়ে বাড়ীতে গিয়ে সাইমুনের মায়ের পিছনে লুকালো।
সাইমুন হাঁপাতে হাঁপাতে বলল।তিতা মায়ের পিছন থাইকা বাইর হ।তিথি সাইমুনের মায়ের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদো কাঁদো সুরে বলল।
চাচি দেখো না তোমার মাস্তান পোলা আমার মতো অবলা নারীরে মারার লাইগা দোড়াইতেছে। তুমি ওরে কও এখান থাইকা যাইতে। না হলে কিন্তু আমি কান্না করে দিমু। সাইমুনের মা তিথির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল। আমি থাকতে ও তোরে মারতে পারবো না। সাইমুন তুই এখান থাইকা যা।
সাইমুন হতাশ হয়ে বলল। মা তুমি সব সময় এই পেত্নী মাইয়ারে বাঁচায় নাও। কথাটা বলে সাইমুন রাগে গিজগিজ করে লুঙ্গি গামছা নিয়ে পুকুরে গোসল করতে চলে গেলো।
তিথি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল। চাচি আমি কি দেখতে পেত্নী? কে বলল তুই পেত্নী? তুই একটা পরী রে মা। চাচি আমারে তোমার কেমন লাগে? খুব ভালো লাগে। তোর মতো একটা মাইয়ারে ঘরের বউ বানাতে ইচ্ছা করে। তিথি মনে মনে কি একটা ভেবে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।
এই পুকুরের এক বাড়ী পর তিথিদের বাড়ী। তিথি দিনের বেশিরভাগ সময়ই সাইমুনদের বাড়ীতে থাকে। বিশেষ করে সাইমুন যখন বাড়ীতে থাকে।
সাইমুন পুকুরে নেমে কিছুক্ষণ সাঁতার কেটে উপরে তাকাতে দেখে—
তিথি হাঁটু ভাজ করে আনমনা হয়ে ঘাটে বসে আছে। সাইমুন দুষ্টুমি করে কূলে এসে তিথিকে এক কোষ পানি মারলো। তিথি চমকে উঠে বলল।
এই পানি মারোছ কেন? আমি গোসল করে কত কষ্ট করে সেজেছি ভিজিয়ে সাজ নষ্ট করলে কিন্তু তোর খবর আছে। এইটা আমার প্রিয় শাড়ী, এই শাড়ীটা ভিজাইছ না। সাইমুন বলল। দিন দুপুরে এতো সাজোছ কেন? তিথি বলল। তোরে কমু কেন? আমার ইচ্ছা হয় তাই সাজি৷ আমার দিকে তাকাইতে মন না চাইলে আকাশের দিকে তাকাইয়া থাক।
সাইমুন গোসল সেরে উপরে উঠতে উঠতে বলল৷ আমার লুঙ্গিটা দে। তিথি লুঙ্গিটা হাতে নিয়ে মনে মনে দুষ্টুমির হাসি হেঁসে বলল।
দিমু তার আগে ক আমি যা বলমু সব শুনবি।
আমি তোর কোনো কথায় শুনুম না৷ তুই লুঙ্গি দে। তিথি বলল। আরে আরে এই এক পাও আগাবি না। আগালে লুঙ্গি নিয়া দৌড় দিমু। সাইমুন বলল। আচ্ছা আগামু না লুঙ্গি দে। তিথি বলল।
আগে বল এইবারে মেলায় আমারে নিয়া যাবি? হুম নিয়া যামু এইবার লুঙ্গি দে। না আগে বল আমারে নীল রঙের কাঁচের চুড়ি কিনা দিবি? আরে বাপ তুই যা বলবি তাই করুম তুই লুঙ্গি দে। না আগে বল তুই আমারে তোর সাইকেলে করে পুরা গ্রাম ঘুরাবি। আচ্ছা ঘুরামু। সত্যি তো? হুম সত্যি। না ঘুরালে আর কোনোদিন তোর সাথে কথা বলব না।
কথাটা বলে তিথি সাইমুনের দিকে লুঙ্গিটা ছুঁড়ে দিয়ে বলল। আমি তো আর তোর বউ না যে তোর গোসল দেখতে পারুম।
বলেই তিথি ঘাট থেকে উঠে চলে গেলো। সাইমুন তিথির কথার টিকিটাও বুঝলো না।

পরদিন সাইমুন সাইকেলে করে বাজার থেকে আসছে। অন্যপাশের রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখে— তিথি তার বান্ধবীদের সাথে কলেজ থেকে আসছে। তিন রাস্তার মোড়ে এসে দুজন সামনা সামনি হয়ে গেলো। তিথি সাইমুনকে দেখে তার বান্ধবীদের বলল। এই তোরা যা। আমার ড্রাইভার চইলা আইছে৷ তিথির বান্ধবীরা চলে যেতে সাইমুন বলল। এই শাঁকচুন্নি আমি তোর ড্রাইভার? কোন দিক দিয়ে ড্রাইভার হলাম রে? তিথি হাই তুলতে তুলতে বলল৷ ড্রাইভার না তো কি? তুই এখন আমারে সাইকেলে করে নিয়া যাবি। ওই পেত্নী আমি কি একবারও বলছি তোরে সাইকেলে নিয়া যামু? তুই হাঁটি হাঁটি বাড়ী যাবি।
তাইলে আমার সাথে তুইও হাঁটবি। নয়তো বাড়ী গিয়া চাচিরে কমু তুই আমার বান্ধবী চম্পারে প্রেম পত্র দিছিস। কথাটা বলে তিথি চোখ মারলো।
সাইমুন হা করে বলল। তুই এসব কি বলছিস? আমি তো তোর বান্ধবী চম্পারেই চিনি না থাকতো যাক প্রেম পত্র দিবো৷  তিথি বলল। সেটা তো আমি আর তুই জানি কিন্তু চাচি তো জানে না। আমি আরও বলব তুই প্রতিদিন চম্পারে নিয়া সাইকেলে করে ঘুরে বেড়াচ। এটা বললে তো নিশ্চিত চাচি তোরে বাড়ী থাইকা বাইর কইরা দিবো।
সাইমুন অসহায় হয়ে বলল। এই তিতা এসব বলিস না৷ এমন ভাবে বলল যেন সে সত্যিই চম্পাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতো।
তিথি বলল৷ আচ্ছা বলমু না আমার লগে চল।
সাইমুন আর তিথি হাঁটতে শুরু করলো। সাইমুন এক হাতে সাইকেল ধরে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে তিথি বলল।
চম্পা তোর জন্য প্রেম দিছে। তোরে নাকি তার ভালো লাগে। লাইলি মজনুর, লাইলির মতো ভালোবাসে। তোরে ছাড়া নাকি বাঁচবো না। আমার হাতে পায়ে ধরছে তরে রাজি করানোর জন্য।
সাইমুন বলল। প্রেম পত্রটা আমায় দে পড়ে দেখি। তিথি থমকে দাড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
প্রেম পত্র পড়ার খুব শখ? আমি প্রেম পত্র ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি৷ আমি তোরে কারো প্রেম পত্র পড়তে দিমু না৷ কেনো? তিথি কিছু বলল না। নিশ্চুপ হয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলো।
সাইমুন তিথির কথার মানে বুঝলো না। মাঝে মধ্যে তিথি এমন এমন কথা বলে যেগুলোর মানেটা সাইমুন খুঁজে পাই না।

কিছুদূর যেতেই তিথি হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলল। এই দেখ গাছে আম। আমি পাড়বো। সাইমুন বলল৷ তো আমি কি করব? তুই আমারে কোলে করে উপরে তুলবি। সাইমুন বলল। আমি পারবো না তুই উঠ। তিথি ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বলল। তাহলে আমি চাচিকে বলব.... সাইমুন বলল। বুঝেছি আর বলতে হবে না৷  সাইমুন সাইকেল দাঁড় করিয়ে তিথিকে কোলে তুলে উপরে উঠালো। তিথি হাত উঁচিয়ে বলল। আম নাগালে পাচ্ছি না আর একটু উপরে তুল। সাইমুন তিথিকে শক্ত করে ধরে আর একটু উপরে উঠালো। হঠাৎ তিথি সাপ বলে জোরে চিতকার দিয়ে উঠলো। সাইমুন গাভরে গিয়ে তিথিকে ছেড়ে দিয়ে নিচে পরে গেল তিথিও এসে পড়লো সাইমুনের বুকে। তিথি ভয়ে সাইমুনের শার্টের কলার খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে রইলো। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর সাইমুন বলল। এই তিতা আমার উপর থেকে সর। তিথি চোখ খুলে বলল। না সরলে কি করবি? মারবি? সাইমুন বলল৷ এই সর তুই যুবতী মেয়ে গ্রামের লোক দেখলে কি বলবে? তিথি নাক লাল করে বলল।
এই তিথি কাউকে পাত্তা দেয় না। যে যা বলার বলুক। সাইমুন বলল। তিতা গ্রামের লোক তোরে এভাবে দেখলে তোর বদনাম করবে। তুই তো বিয়ের পর জামাইর বাড়ীতে যাবি তখন তোরে অনেকে খোঁটা দিবে।
তিথি মনে মনে বলল। বিয়ের পর তো তোর বাড়ীতেই যাবো। খোঁটা দিবার জন্য কারো মুখ থাকবে না। তিথি অন্যমনস্ক হয়ে পড়ায় সাইমুন তিথিকে ধাক্কা দিয়ে তার উপর থেকে ফেলে দিল।

তিথি আর সাইমুনকে নিয়ে প্রতিবেশিরা মতিন মিয়ার কাছে অনেক কথা বলে। কিন্তু মতিন মিয়া কারো কথা কানে তুলে না। মতিন মিয়া মনে মনে একটা জিনিস ভেবে রেখেছে।

পরদিন সকালে, সাইমুন আজ একাই হাড় ভাঙা রোদে ক্ষেতে মাটি কাটছে। মতিন মিয়া আজ অসুস্থ থাকায় মাঠে আসেনি। ক্ষেতের আইলে তিথি বসে আছে। সে বাদামের খোসা ভেঙে বাদাম খাচ্ছে আর সাইমুনের দিকে তাকিয়ে টুকটাক কথা বলছে৷ সাইমুন অনেকক্ষণ মাটি কেটে ক্লান্ত হয়ে গামছা দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে তিথির পাশে এসে বসলো৷ তিথি বাদাম খাওয়া বন্ধ করে বলল। পানি খাবি? হু। তিথি এক দৌড়ে পানি আনতে চলে গেলো। পাশের এক বাড়ী থেকে পানি এনে সাইমুনকে দিল। সাইমুন পানি খেল। তিথি বলল। এতো কষ্ট করে চাষ করার কি দরকার? তোরে না কইছি পাড়ার স্কুলে মাস্টারি করতে। সাইমুন শান্ত গলায় বলল। এই কষ্টের মাঝেও সুখ আছে। যেই কাজে কষ্ট বেশি সেই কাজে আনন্দও থাকে বেশি। এই যে এতো পরিশ্রম করে এখানে বিশ্রাম নিচ্ছি এতে অনেক ভালো লাগছে। যত বেশি পরিশ্রম করে সামান্য বিশ্রাম নিবি তত বেশি ভালো লাগবে। শরীরে এক অফুরন্ত ভালো লাগা কাজ করবে।
তিথি বলল। জ্ঞানীদের মতো কথা বলা বন্ধ কর। তুই এখন থেকে আর কষ্ট করে চাষ করবি না। সাইমুন বলল। আমি কষ্ট করলে তোর কি? তিথি নিজের মধ্যে বিড়বিড় করে বলল। তোর কষ্ট আমি দেখতে পারি না৷ সাইমুন বলল। কি বললি বুঝি নাই।
কথাটা বলে সাইমুন ঘাড় ঘুরাতে দেখে রাস্তায় একটা সাদা কার দাড়িয়ে আছে। আর স্কুলের ইউনিফর্মের সাদা পোশাক মাথায় টুপি লাগিয়ে একজন লোক হাত উঁচিয়ে তাকে ডাকছে।
সাইমুন গাড়ির দিকে এগিয়ে রাস্তায় উঠতে দেখে— লোকটার পোশাক সত্যি সাদা। বড়লোকদের ড্রাইভারের পোশাক যেমন হয় ঠিক তেমন। সাইমুন গলার গামছা দিয়ে মুখ মুছে বলল।

আমায় ডাকছিলেন? লোকটা বিরক্তি মাখা গলায় বলল। কেন দেখেন নাই আপনারে হাত ইশারা করছি যে? হুম দেখছি বলেন কেনো ডাকলেন? ড্রাইভার বলল। আমার মেডাম আপনার সাথে কথা বলবে৷
কথাটা বলে ড্রাইভার গাড়ির দরজায় টোকা মেরে বলল৷ মেডাম একজনকে পেয়েছি তাকে জিজ্ঞেস করুন।
হঠাৎ গাড়ির কালো আয়নাটা নেমে গেল।
গাড়ির ভিতরে কালো সানগ্লাস পড়া একটা মেয়ে বসে আছে। সানগ্লাসের কারনে তার অর্ধেক মুখ দেখা যাচ্ছে না৷ শুধু ঠোঁট জোড়া দেখা যায়। গায়ের রঙ বড়লোক মেমসাহেবদের মতো। গায়ে দামি শাড়ী। দেখে মনে হচ্ছে বেশ বড়লোক কেউ।
মেয়েটা ঠোঁট নেড়ে কি যেন বলল সাইমুন বুঝতে পারেনি৷
সাইমুনকে চুপ দেখে মেয়েটা আবার বলল। চুপ করে আছেন কেনো? সাইমুন মাথা চুলকে বলল। কি বলেছেনে বুঝি নাই মেমসাহেব। মেয়েটা নরম কোকিল কন্ঠে বলল। আপনি কি এই গ্রামের বাসিন্দা? আজ্ঞে হ্যা মেমসাহেব। আপনি করিম তালুকদারের বাড়ী চিনেন? সাইমুন বলল।
আরে চিনি মানে খুব ভালো কইরা চিনি। এই তো সোজা যাইয়া ডানে মোড় নিবেন তারপর আবার সোজা যাইতে যাইতে একটা পুকুর পড়বো ওই পুকুরের পাশে ইট পাথর দিয়া গেট করা বড় বাড়ীটা।
তরুণী মেয়েটা গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল। আপনি গাড়িতে উঠে আসুন। সাইমুন বলল। সব তো বলে দিয়েছি। আশা করি আমি যাওন লাগবো না। আমার কাম আছে আমি যাই।

সাইমুন রাস্তা থেকে নেমে তিথির কাছে চলে গেল। গাড়িটা এখনো যায়নি। মেয়েটা গাড়ির আয়না না উঠিয়ে সানগ্লাস খুলে সাইমুনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেল। সাইমুন কাছে যেতেই তিথি বলল। গাড়ির লোকটা তরে ডাকলো কেন? আরে এক বড়লোক মেমসাহেব করিম চাচার বাড়ী খুঁজতেছে। আমি বাড়ীর পথ বলে দিলাম। বাপরে বাপ কি যে বড়লোক। কি দামি সানগ্লাস। কি দামি শাড়ী। দেখতেও একবারে পুতুলের মতো। তিথি রাগে কটমট করে নাকের ডগা লাল করে বলল।
লুইচ্ছা বেডা! হারামি! সুন্দর সুন্দর মাইয়া দেখলেই কথা বলতে মন চায়? ওই মাইয়া কথা বলতে চাইলেই কথা বলবি কেন? তুই ওই মাইয়ার দিকে তাকাইলি কেন? ওই মাইয়ার লগে বাড়ি চইলা যাইতে পারোছ নাই?
যাইতে কইছিল আমি যাই নাই। তুই এখানে একা আমি চইলা গেলে তুই একা একা কি করবি তাই। আমি তোর কে? আমি একা থাকলেই বা তোর কি? সাইমুনের কথা বন্ধ হয়ে গেল। সে নিজেও এই এই প্রশ্নের উত্তর জানে না। সে একটা অস্বস্তির মধ্যে পরে গেল।

তিথি সাইমুনের অস্বস্তি দূর করার জন্য হঠাৎ কি একটা ভেবে কথা পাল্টে হেঁসে হেঁসে বলল। গুন্ডা খচ্চর আইজ চাচির কাছে তোর নামে নালিশ দিমু। কেন আমি করছি? তুই আমারে মারছোত। এই তুই আমারে তুই করে বলিস কেন? আমি তোর দুই বছরের বড়। একশো বার তুই বলুম তুই তুই তুই। তবে রে? সাইমুন তিথিকে দৌড়াতে লাগলো। তিথিও শাড়ী ধরে দিল দৌড়। তিথি দৌড়াতে দৌড়াতে পিছন ফিরে জিহ্বা দিয়ে ভেংচি কাটতে কাটতে বলল। তুই আমারে ধরতে পারবি না পারবি না৷ আমারে ধরা সহজ না৷
হঠাৎ তিথি পা ধরে বসে পড়লো।
সাইমুন দৌড়ে কাছে গিয়ে দেখে তিথির পা থেকে রক্ত পড়ছে। সাইমুন হাটু গেড়ে বসে তিথির পা হাতে নিয়ে দেখে পায়ে শামুকভাঙা  গেঁথে আছে।তিথি জিম খেটে আছে। চোখ দিয়ে গলগল করে পানি পড়ছে।
সাইমুন শামুকভাঙা ধরে এক টানে খুলে নিল। তিথি ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠে সাইমুনকে খামচে ধরে। সাইমুন বলল। চোখ খুল শামুকভাঙা আর নেই। হেঁটে হেঁটে বাড়ি যেতে পারবি? তিথি কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে না সূচক ঘাড় নাড়লো।  না পারলে হেঁটে যাওয়ার দরকার নাই।
সাইমুন তিথিকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিল।
কোমড়ে সাইমুনের হাতের স্পর্শ লাগতেই তিথির পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।  আর সাইমুমের মনে ভালোবাসা জেগে উঠে। ঘরে পৌঁছে তিথি বলল আমাকে কোলে নিয়ে কেমন লাগল?  তখন সাইমুন বলল বেশ ভালো লাগল। এরপর একদিন সাইমুন তিথিকে একটি প্রেমপত্র দেন, তখন তিথি তা গ্রহণ করে। এরপর থেকে হয়ে যায় প্রেমিক প্রেমিকার মত। 


লেখক : মোহাম্মদ মনির, গণমাধ্যমকর্মী
০১৮৩৩২৬৭৪৬৭


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

বিজ্ঞাপন

জ।


https://vindaleue.xyz/2025241470119